প্যারালাল প্রসেসিং এর বাস্তব উদাহরন পাওয়া অসম্ভব (Parallel processing is quite impossible in real life)

প্যারালাল প্রসেসিং নিয়ে বকবকঃ (কম্পু রিলেটেড লোকজনই শুধু পড়েন, আর্টস, কমার্সের কেউ পড়লে মাথা ঘুরাইতে পারে।)

অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারনা আছে। অনেকেই মনে করে যে আধুনিক কম্পিউটারে প্যারালেলিজম সম্ভব। এর পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় মাল্টি থ্রেডিং নিয়ে। একটা অ্যাপ্লিকেশনে ৫ টা থ্রেড চালু করা হয় যার প্রত্যেকটি থ্রেড ৫ সেকেন্ড করে সময় নেয়। তাহলে সবগুলা থ্রেড কমপ্লিট হতে ৫ * ৫ = ২৫ সেকেন্ড লাগার কথা। নিচের এই লিঙ্কটিতে এরকম ই উদাহরন দিয়ে মাল্টি থ্রেডের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে পাচটি থ্রেড আসলে ৫ সেকেন্ডেই শেষ হচ্ছে। এটাকেই তারা বলেছেন প্যারালাল প্রসেসিং।

https://howtoprogramwithjava.com/java-multithreading/?hc_location=ufi

প্রথমে থ্রেড নিয়েই বলি। ৫ সেকেন্ডের কাজ দিয়ে আধুনিক প্রসেসরের ক্ষমতা পর্যবেক্ষন করতে চাইলে আমার মতে সেটা হবে প্রসেসরের ক্ষমতাকে অপমান করা। প্রসেসর এতই দ্রুত একটা কাজ শেষ করে অন্য কাজ শুরু করে যা আমাদের চোখে ধরা পরার বাইরে। যেকারনে ৫ সেকেন্ড করে লাগে এমন পাচটা থ্রেড চালালে, সবগুলা থ্রেড মোটামুটি ৫ সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পাচটা থ্রেড কিন্তু একি সাথে চলে না। টাইম শেয়ারিং এর মাধ্যমে প্রত্যেক থ্রেডের পেছনেই প্রসেসর সময় ব্যয় করে অ্যালগরিদম অনুযায়ী। সেক্ষেত্রে যে কারনে কোন থ্রেড আগে শেষ হবে, কোনটা পরে। একি সাথে ৫ টা থ্রেড শেষ হবে না। যেহেতু, ৫ সেকেন্ডের কাজ দিয়ে প্রসেসরের ক্ষমতা বোঝা যাবে না, তাই এই থ্রেড গুলোর সময় বাড়িয়ে একঘন্টা করে দেখা যেতে পারে। মানে একঘন্টা করে সময় লাগে এমন ৫ টা থ্রেড একসাথে শুরু করব এবং এবং কোন থ্রেড কখন শেষ হয় তার সময় টা নোট করব। আগ্রহীরা উপরের উদাহরনের কোডটা একটু মডিফাই করেই এই পরীক্ষা টা করে দেখতে পারেন।

এবার প্রসেস নিয়ে কথা বলি। ধরে নেই, কোর আই X প্রসেসরে ৫ টা কোর (মাইক্রো প্রসেসর) থাকে। আসলে ব্যপারটা এমন যে এই কম্পিউটারের মুল প্রসেসর ৫ টা যারা আসলেই টাস্ক প্রসেস করে। আর আমরা যেটাকে প্রসেসর বলি সেটি আসলে একটা কন্টেইনার যার ভেতর সেই মুল ৫ টা কোর প্রসেসর গুলো থাকে। এই কন্টেইনার প্রসেসরের কাজ হল যখন কোন টাস্ক আসবে তার কাছে তখন সে অ্যালগরিদমের উপর নির্ভর করে ওই সময়ের পটেনশিয়াল কোর প্রসেসরকে টাস্কটা অ্যাসাইন করবে। এখন আপনি ৫ টা প্রসেস (প্রত্যেক প্রসেস কম্প্লিট হতে সময় লাগে ৫ মিনিট)একি সময়ে স্টার্ট করলেন। প্রত্যেক কোর প্রসেসর কে একটা করে টাস্ক অ্যাসাইন করা হল। তাহলে একি সাথে সবগুলো প্রসেস কম্প্লিট হবে ৫ মিনিটেই যেখানে ৫ * ৫ = ২৫ মিনিট লাগার কথা ছিল। হ্যা, আপনার মনে হতে পারে যে এখানে প্যারালাল প্রসেসিং হল।
এটা কি সবসময় ৫ মিনিটেই হবে? ভেবে দেখুন তো। ধরেন আপনার ৫ টা কোরের মধ্যে এই মুহুর্তে ৪ টা ফ্রি আর একটা ব্যাস্ত আছে। তখন এই ৫ টা প্রসেস কম্প্লিট হতে ১০ মিনিটের বেশী সময় লাগবে ( প্রথম ৪ টা টাস্ক শেষ হবে ৫ মিনিটে। তারপর যখন কোন প্রসেসর ফ্রি হবে তখন ৫ নম্বর টাস্ক টা শুরু হবে এবং এটা শেষ হতে আরও ৫ মিনিট সময় লাগবে)। ধরেন, এখন ৪ টা কোর ই ব্যস্ত। আপনার জন্য শুধু একটা কোরই ফ্রি আছে। তখন সময় লাগবে ২৫ মিনিট।

মানুষের ব্রেইন এর নিউরন গুলো হল এক একটা কোর প্রসেসিং ইউনিট। যদিও মানুষের ব্রেইন আসলেই কিভাবে কাজ করে তা এখনো শতভাগ বের করা সম্ভব হয় নি তবে মোটামুটি একটা আইডিয়া করে সেই জিনিসটাই ইম্পলিমেন্ট করেই কম্পিউটারের প্রসেসর বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

অনেক সময় আমাদের এমন হয়, হঠাৎ কোন কিছু একটা মনে করতে চাইলাম। কিন্তু কিছুই মনে পড়ছে না (আঞ্চলিক ভাষায়, পেটে আছে, মুখে নাই)। ২-১ দিন পর অন্য কোন কাজ করছেন এমন সময় হঠাৎ করেই সেই জিনিস টা মনে পড়ে গেল। হয় না এমন? এর কারন হচ্ছে কোন একটা নিউরন ওই জিনিসটা খোজার কাজে ব্যস্ত ছিল। যখনি পেয়েছে সাথে সাথে আপনাকে জানিয়ে দিয়েছে। ওই সময়ে ওই নিউরন টা শুধু এই একটা কাজেই ব্যস্ত ছিল। মানুষের ব্রেইন আসলে মাল্টি টাস্কিং করে মাল্টিপল সংখ্যক প্রসেসর (নিউরন) দিয়ে। এখানেও প্যারালেলিজম পাওয়া যায় নি।

ভাষাগত ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *